রসায়ন শাস্ত্রে উচ্চশিক্ষা; দরকার শুধু দিক নির্দেশনা, পরিকল্পনা দেবার লোক, আর অনুপ্ররণা।
Rejaul Hoq Nayem at Discovery Park at Purdue University. posted in https://www.facebook.com/groups/345456990542/
রসায়ন বিজ্ঞান বিষয়টা কতোটা প্রাণের সাথে সম্পর্কিত আমরা ৪-৫ বছর অনার্স মাষ্টার্স করে ও কেউ বুঝিনা। না বুঝার যথেষ্ট কারন ও আছে। গতানুগতির মুখাস্ত বিদ্যা দিয়ে সিজিপিএ তোলার প্রতিযোগিতা আর আর্থ-সামাজিক অবস্থার প্রেক্ষিতে অনার্সের ২-৩ বছর না কাটতেই মাথায় চাকরি বাকরীর যে টেনশন ডুকে এতে রসায়নের সাথে জীবনের সম্পর্ক খোজার আর সময় থাকে না। রসায়ন বিষয়টা একটা গবেষণা ভিত্তিক বিষয় যেটা আমাদের বিভিন্ন কারনে হয়ে উঠে না। আর ভর্তি পরীক্ষার প্রাপ্ত নাম্বারের উপর ভিত্তি করে হয়তো ভাগ্যচক্রে রসায়ন বিষয়টি পেয়ে থাকি এতে দেখা যায় যে, ৯০ ভাগ ছাত্রই রসায়নে পড়ার কোন স্বপ্নই ছিল না। এখানে আনন্দ, বেদনা , সুখ, দু:খ সবই আছে। এখানে হতাশা ও একটু আছে-তবে ধৈর্যের অনেক প্রয়োজন। এই পথে প্রাপ্তিগুলোর স্বাধ একটু ভিন্ন। তাড়াতাড়ি ব্যাংক ব্যালেন্স আর তামাম দেশ বা বিশ্বের ক্ষমতা হাতে পাওয়ার পথ এইটা না-এই ব্যাপরটা মোটামুটি নিশ্চিত আবার অ্যাপেলের মতো বড়সড়ো একটা কোম্পানি দেওয়া টা সম্ভব বলে মনে হয় না। । এই পথে কোন ঘুষ, খুন, জমি দখল, চাটুকারী এমন কিছুই নেই। পুরোটাই একমুখী মানবকল্যানের পথ। শত শত গবেষক দিন রাত অক্লান্ত পরিশ্রম করে মানব কল্যানের জন্য ।আসল কথায় আসি। আমি ২০১৩ সালে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যাল থেকে রসায়ন শাস্ত্রে স্মাতক ডিগ্রী লাভ করি। হতভাগা কপাল আমার সিজিপিএ বাড়ানোর প্রতিযোগিতায় আমি আর টিকতে পারি নি। ১ম ও ২য় বছর জিপিএ এতো কমে যায় আর পরবর্তীতে তা বাড়াতে পারি নি। এক পর্যায়ে আর বাড়ানোর চেষ্টা না করে জি.আরই, আর আইএলটিসের দিকে মনোযোগ দিলাম। মাস্টার্সে কম সিজিপিএ র কারনে থিসিস করার যোগ্যতা হারাই। আমি আগেই বুঝতে পেরে ৪র্থ বর্ষে জিআরই পরীক্ষা দিয়ে দেই। প্রথম ও ২য় বার স্কোর কম আসায় হতাশ হলেও হাল ছাড়ি নি। ৩য় বার একটা মোটামোটি ভালো স্কোর এসেছে। বন্ধুরা মাস্টার্স ক্লাশ করেছে আর আমি উড়াল দিলাম আমেরিকার টেনেসি স্টেট ইউনিভার্সিটিতে। দুই বছরেরর থিসিসে আমার ৩ পেপার হলো, পরে পিএইচডির জন্য ১২ টা বিশ্ববিদ্যালয়ে এপ্লাই করি ফুল ফান্ডিং সহ ৭ টা তে চান্স পাই। তারা আমাকে নিজ খরচে বিমান ভাড়া দিয়ে হোটেল খরচ সহ বিশ্ববিদ্যালয় ঘুরার সুযোগ দিয়েছে । আমি একা মানুষ আর কয়টা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে পারি-এই সাথে আছে আরো অনেক মজার স্মৃতি। এর মধ্য থেকে বেছে নিলাম সবচেয়ে ভালোটি পাডু বিশ্ববিদ্যালয়। আমেরিকার টপ ২০ এর মধ্যে একটি। এটিকে বলা হয় চাঁদে যিনি প্রথম গিয়েছিলেন সেই নেইল আমস্ট্রংয়ের বিশ্ববিদ্যালয়। উনি এখানের ছাত্র ছিলেন। বুয়েটের অনেকেই আছেন তবে রসায়েনর খুব কমই-২ বা এক জন। যেই আমি জা.বি. তে সিজিপিএর গেড়াকলে থিসিস করতে পারি আজ আমার বর্তমান স্কুলে রসায়নে নোবেল পাওয়া ২ জন রসায়নবিদ আছেন। প্রফেসর এইচ.সি. ব্রাউন আর প্রফেসর নিগিসি। যাই হোক এতো কিছু বলার দরকার ছিল না। আমি জানি আমার মতো বিলো এভারেজ অসংখ্য ছাত্র এই রসায়ন বিভাগে আছে যাদের দরকার একটা দিক নির্দেশনা, পরিকল্পনা দেবার লোক, আর অনুপ্ররণা।
এসব থাকলে লো সিজিপিএ কাউকেই আটকাতে পারে না। বেক বেঞ্চার ছাত্রগুলোকে উচ্চ শিক্ষার অনুপ্রেরণা দেবার জন্য সব সময় চেষ্টা করি। ক্লাসে ভালো সিজিপিএ নিয়ে প্রফেসরের মন সবাই জয় করতে পারে, কিন্তু লো সিজিপিএ নিয়ে আমাদের কিছুই করার নেই। অনেক দেখেছি লো সিজিপিএ ধারী ছাত্রের সাথে শিক্ষকগণ ঠিক মতো কথাও বলে ন না। তাদের জন্য পরামর্শ আপনারা যারা ১ম, ২য় বা ৩য় বর্ষে আছেন আজই জিআরইএর জন্য প্রস্তুতি শুরু করে দিন। জিআরইতে একটা এভারেজ স্কোর হলে কোন শিক্ষকের বিশেষ সুদৃষ্টির দরকার হয় না। জিআরই স্কোর আপনার ফান্ডিং এনে দিবে। আমি বেশ কিছুদিন আগে আপনাদের বিভাগের সাবেক চ্যায়ারম্যান শামীমা আক্তার ম্যাডামের সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করছিলাম, কয়েকটি ইমেইল দিয়েছিলাম যে কিভাবে বর্তমান ছাত্রদের সাথে উচ্চ শিক্ষার ব্যাপারে ইন্টারেকশন করা যায় কিন্তু ম্যাডাম আমাকে কোন রিপ্লাই দেননি।
আমি আমেরিকার বেশ কিছু বিশ্ববিদ্যালয় পড়াশোনার খাতিরে গুরেছি । ঢা.বি. , জা.বি এর অনেককে দেখেছি কিন্তু আপনাদের রসায়ন বিভাগের কাউকে দেখি না। তাই অনেক দিন থেকে ভাবছি কিভাবে একটা সংযোগ করা যায়। অনেকে এই বিশ্ববিদ্যালয় সেই বিশ্ববিদ্যালয় বলে নানা রকম পার্টিশন করে, কোরাম করে এতে করে দেখা যায় যে, যারা আমেরিকা পড়তে আগে এসেছে , তারা আরো বেশী বেশী আসছে , আর যে সব বিশ্ববিদ্যালয়ের কেউ আসেনি তারা নেটওয়ার্কিং না থাকার কারনে আসতে পারছে না। আমার কাছে মনে আমরা সবাই এক, এক দেশের মানুষ। যে কেউ যে কাউকে সাহায্য করতে পারি। এর জন্য বিশেষ কোন বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র হবার প্রয়োজন নাই। পরিচয় একটাই রসায়নের ছাত্র আর বাংলাদেশের মানুষ। লেখাটি সুন্দর করে লিখত এ্কটু সময় লেগেছে আর কোন ভুল ত্রুটি থাকলে ক্ষমা করবেন। আর কিভাবে প্রস্তুতি শুরু করবেন আর কি কি কর দরকার এই ব্যাপারে আরো বিস্তারিত লিখবো পরের লেখাটি।
Comments
Post a Comment