লহরীপুর! যাত্রাপালা; অঙ্ক-১, দৃশ্য-১; শিক্ষা


আপাতত দুই চরিত্র; রাজা শশাঙ্ক ও মন্ত্রী নরেন্দ্রগুপ্ত

[লহরীপুরের একচ্ছত্র অধি:পতি রাজা “শশাঙ্ক” বড় ভাবকচিত্তে লৌহাসনে বসিয়া রাজ্যের আলোড়িত শিক্ষাপাদের জন্য কালাতিপাত করিতেছেন। কিয়ৎক্ষণ পরেই সচিবশ্রেষ্ঠ “নরেন্দ্রগুপ্ত ” মহারাজ.. মহারাজ. আওয়াজ তুলিয়া “মন্ত্রীসভা” নামক গোপন কক্ষে জানু নত করিয়া রাজার সামনে আসিয়া দাড়াইলেন।] কিয়ৎক্ষণ বাগরাগমুখ থাকিয়া রাজা ললাট কুঞ্চিত করিয়া আলোচন শুরু করিলেন]
শশাঙ্ক।। নরেন্দ্রগুপ্ত! প্রাতরাশে ছদ্মবেশে জনমানুষের সাথে মিশিয়া শুনিলাম রাজ্যের শিক্ষা ব্যবস্থার নাকি বেহাল দশা। রাজ সিংহাসনে বসিয়া তো আমার বিকল মস্তিষ্কে কিছুই বোধগম্য হইতেছেনা।
নরেন্দ্রগুপ্ত।। আপনার কথা কিয়দাংশ সত্য, মহারাজ!! আমি রাজ্যে প্রশ্নপ্রত্র ফাঁস কমাইতে দেরী হইলেও পাশের হার কিন্তু বহুলাংশে বাড়াইয়াছি জাঁহাপণা, যাহা আসন্ন নির্বাচনের জন্য গুরত্বপূর্ণ বিজ্ঞাপনের কাজ করিবে। তাছাড়াও, চারিলক্ষাধিক বেকার এখন উচ্চ শিক্ষিত। আমার আগে কখনো এতো বেকারকে শিক্ষিত করিতে কেউ পারে নাই। এখনো কি বলিবেন যে, আমি এ-রাজ্যের জন্য কিছুই করি নাই,মহারাজ?
শশাঙ্ক।। সত্যিই কি তুমি সবাইকে শিক্ষিত করিতেছ নরেন্দ্রগুপ্ত?
নরেন্দ্রগুপ্ত।। পরিসংখ্যান কি কথা বলে না, মহারাজা? যদি শিক্ষিত না বানাইতে পারি, তাহলে “স্বল্পোন্নত” থেকে “উন্নতীশীল” সাম্রাজ্যের খেতাব আমাদের কেন দেওয়া হইলো জাঁহাপনা!!
তবে প্রকৃত শিক্ষার ব্যাপারে আমার ও কিঞ্চিৎ সন্দেহ রহিয়াছে। যদি সত্যিকারের শিক্ষিত বানাইবার চেষ্টা করি, ঐ শিক্ষিত প্রজাকূল আমাদের একদিন টেনেহিচড়ে রাজপ্রাসাদ থেকে বাহিরে নিক্ষেপ করিবে। তাই সুকৌশলে একটু উন্নত ধরণের হীরক রাজার দেশ বানাইয়া রাখিতেছি।
শশাঙ্ক।। স্বল্পোবিদ্বান, বিদ্বানশীল, বিদ্বান সবজাতকে “সোলায়মানি” চাকুরী পরীক্ষায় অতি আগ্রহী দেখা যাইতেছে। লহরীপুরে আর কোন জীবনালম্বনের উপয়ান্তর বাহির করিয়া দেখাইতে পারো না? এক অকালপক্ক শাক্ষানবীস “সোলায়মানী” পরীক্ষায় অকৃতকার্য হইয়া আত্মহননের পথ বাছিয়া নিয়াছে। এ কেন ঘটিবে আমার রাজ্যে নরেন্দ্রগুপ্ত। সাম্রাজ্যে নির্বাচনের আগে এসব তো আমলোক খুব করিয়া মনে রাখিবে। এই ব্যাপারে ভাবিয়াছ কিছু?
নরেন্দ্রগুপ্ত।। অতি উত্তম বলিয়াছেন, মহারাজ!! কটিবন্দ করিয়া একশ্রেণী শুধু পড়িতেছে আর পড়িতেছে। এই রকম দুএকটা কাপুরুষ মরিলে রাজ্যের কিছু যাইবে আসিবে না, মহারাজ। সে আরেকবার চেষ্টা করিতে পারিতো। “পঙ্গপালের” সাথে মিলিয়া মিশিয়া চলিলে আজ তাকে পটল তুলিতে হইতো না। জাঁহাপনা!
শশাঙ্ক।। রাজ্যের বড় বড় পত্রিকার পাতায় তো চোক্ষু খুলিয়া বেশীক্ষন তাকাইয়া থাকিতে পারি না, টেলিভিশন ও দেখা ছাড়িয়া দিয়াছি।
নরেন্দ্রগুপ্ত।। কেন মহারাজ!!
শশাঙ্ক।। সোলায়মানী পরীক্ষায় মাত্রারিক্ত কোটা পরিহার করার দাবি করিয়া চাটুকাতন্ত্রের অভাগা বেকার ছাত্রলোক বাগবাগিছায় যে পদযাত্রার নাম করে সমবেত হইতেছে, তাহা যদি আরো ফুলিয়া ফুপিয়া উঠে, কি হইতে পারে তোমার কোন ধারণা আছে! চারি লক্ষাধিক বেকারের ঠেলা সামলানোর ক্ষমতা আছে আমাদের? রাজ্যের চৈতন্য নিয়ে তারা কোন সাহসে আমার রাজ্যে খেলা করিবে?
নরেন্দ্রগুপ্ত: মহারাজা! আপুনি ঠিকই বলিয়াছেন। এরা এতোই হতোভাগা যে, পরীক্ষার দাবি করিয়া চক্ষু হারাইয়াছে। তামাম দুনিয়ায় এমন নজির বিরল।
এই ব্যাপারে আপনি বিন্দু বিসর্গ ও চিন্তা করিবেন না। বাগবাগিচার ফাঁকফোঁকরে আমি গুপ্তচর পাঠাইয়াছি । পঙ্গপালের উপর ও আমি এখনো বিশ্বাস হারাই নাই। এরকম অশান্ত দুএকটা বাগবাগিচা তারাই শান্ত করিতে পারে। তিলে তিলে আমরা যে চামচাতন্ত্র গড়িয়া তুলিয়াছি, তাহা এতো সহজে ভাঙ্গিবার নয়।
আপুনি অভয় দিলে ছোট মুখে একটা বড় পরামর্শ দিতে পারি, আলম্পনা!
শশাঙ্ক।। বলো হে চন্দ্রগুপ্ত!
চন্দ্রগুপ্ত।। মহারাজ আপনি বাগবাগিচায় এসে ঐসব বেকার অভাগা ছাত্রলোোকের সহিত একাত্ততা ঘোষণা করিলে :"চিরমহারাজা" হয়ে প্রজাকূলের মাঝে আজীবন বাঁচিয়া থাকিবেন।
শশাঙ্ক।। খামুস চন্দ্রগুপ্ত। তুমি আমাকে বেয়াকুব ভাবিয়াছো? আমাকে কেন সব সমাধান করিতে হইবে। রাজ্যের নামীদামী বিদ্যাবত্তারা এখন কোথায়? তারা অভাগাদরে সাথে একাত্ততা করিতে পারে না?
রাজ্যের কয়দিন আগে রৈজবক নামক এক জোয়ান দুই যানের তলায় চাপা পড়িয়াছে। সর্বলোকের মুখে ঘেন্না আর থুথু আমি আর নিতে পারছি না নরেন্দ্রগুপ্ত। কোন উজবুকের দল তোমাকে “ফাটাকেষ্ট” বলিয়া ডাকে। আমি তো তোমার মধ্যে কেষ্টের কোন লক্ষ্যনই দেখিতেছিনা।
নরেন্দ্রগুপ্ত।। আপনি শান্ত হউন মহারাজ। দুএকটা রৈজবক পটল তুলিতে আমাদের তেমন কিছু আসিবে যাইবে না।
লহরীপুরের প্রজাকূল মূর্খ, নির্লজ্জ্ব, বেহায়া। এরা সময়ের সাথে সাথে সব ভুলে গিয়ে আবার “শশাঙ্ককেই” রাজা বানাইবে। প্রজাকূল আমাদের সঙ্গে ছিলো, আছে এবং থাকিবে এই ব্যাপারে কোন সন্দেহ নাই।
.............................................................................................................
মহারাজার জয় হোউক! জয় হউক
(চলমান!!)

Comments

Popular posts from this blog

Statement of Purpose এর নমুনা-13 ( Analytical Chemistry)

কিভাবে প্রফেসরকে ইমেইল লেখা যায় !! নমুনা !!

Statement of Purpose analysis from UC Berkeley