সততার মানদন্ডে কোথায় আমাদের ছাত্রছাত্রীদের অবস্থান?
সততার সংজ্ঞা স্থান, কাল ধর্ম বর্ণ ভেদে ভিন্ন হতে
পারে এমনটা কখনো জানা ছিল না।
সৎ সংগে সর্গবাস অসৎ সংগে সর্বনাশ , অসৎ সংগ ত্যাগ করো কতোই না
আদর্শ লিপিতে পড়েছি, ভাব সম্প্রসারণ করেছি, সারাংশ, সারমর্ম করেছি । আদৌকি আমরা সেই সততা অর্জন করতে পেরেছি? সততা অনুশীলেনর মোখ্যম সময়
ছাত্রজীবন । আসলেই আমরা ছাত্র জীবনে কোন সততার অনুশীলন করি? ছোট কালের শিক্ষকের বেতের বাড়ির সাথে আমরা সকলেই পরিচিত। সময়ের সাথে শিক্ষকের হাতে সেই
বেত এখন আর
নাই। নতুন প্রজন্মের ছাত্রছাত্রীদের দুরন্তপনার ধরণ
যেমন বেড়েছে শিক্ষকের বেত চালানোর মাত্রা বেড়ে এক সময়
বর্বরতার দিকেই যাচ্ছিলো। ঠিক
সে সময়ই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বেতের ব্যবহার নিষিদ্ধ করা ছিল
সময়ের দাবি। হাই
স্কুল বা কলেজে দেখতাম শিক্ষক যখন
পরীক্ষা নেবার সময়
পরীক্ষার হলে দ্বায়িত্ব পালন করতেন এদিক ওদিক ঘাড় ঘোরানোর কোন
সুযোগ নাই। হয়তো বা কোন কারণে শিক্ষক হলের বাহিরে বের হতেন, কয়েক মিনিটের জন্য শুরু হতো হৈ হুল্লোড় ঠিক মাছের বাজারের মতো । কলেজ পেরিয়ে যখন বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে আসলাম সেই একই
ধরণের হৈহুল্লোড় ছাড়া ও জানা শোনাদের মধ্যে অনেক পুকুর চুরির মতো কান্ড ও দেখেছি। ভিন্ন দেশে, ভিন্ন পরিবেশে না গেলে নীতি নৈতকতার এই অধ:পতন অনুধাবন করা টা অনেক কঠিন।
আমার আমেরিকায় প্রায় চার বছর হলো। ২০১৫ সালে টেনেসি স্টেট ইউনিভার্সিটি থেকে মাষ্টার্স করে পার্ডু ইউনিভার্সিটিতে রসায়ন বিভাগে পিএইচডি করছি। টিচিং এসিস্ট্যাস হবার কারণে প্রফেসর এবং ছাত্রছাত্রীদের খুব
কাছাকাছি যাবার সুযোগ হয়েছে। টেনেসিতে সরাসরি কোন বিষয় পড়ানোর সুযোগ হয় নি,
শুধু মাত্র ল্যাবোরেটোরিতে ছাত্রছাত্রীদের বিভিন্ন যন্ত্রপাতি ব্যবহারে সাহায্য, পরীক্ষায় খাতা দেখা, হোমওয়ার্ক, গ্রেডিং, পরীক্ষায় প্রক্টরিং এসবে সাহায্য করাই ছিল মূল
দ্বায়িত্ব। ছাত্রছাত্রীদের সাথে বন্ধুসুলভ আচরনের মাধ্যমে ভিনদেশী এসব কোমলমতি ছাত্রদের সততার সাথে নিজেদের তরুনদের তুলনার একটু সুযোগ হয়।
পার্ডু ইউনিভার্সিটিতে টিচিং এসিস্ট্যান্ট হিসেবে অনার্স প্রথম ও দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রদের পড়ানোর সুযোগ হয়েছে যেখানে ২০১৬ ফল সেমিষ্টারে সপ্তাহে ২ টা লেকচার আর ২ টা
ল্যাব আর সেমিষ্টারে ১২
টা কুইজ আর
৪ টা পরীক্ষা একটি ক্লাসে। নানান দেশী ছাত্রছাত্রী এক
ক্লাসে। পার্ডু ইউনিভার্সিটি ইন্টারন্যাশনাল স্টুডেন্ট ভর্তির দিক থেকে আমেরিকার সেরা তিনে। সবার মধ্যে আমেরিকানই বেশী তার পর চাইনীজ। এখানে পড়াশোনার ধরনের মধ্যে যেমন পাথর্ক্য রয়েছে কোমলমতী এই
ছাত্রগুলোর মধ্যে দেখলাম এক ভিন্ন ধরণের সততা ও। সততায় এরা আমাদের তরুনদের চেয়ে অনেক এগিয়ে। আমাদের অনেক কিছু শিখার আছে এদের থেকে। আমাদের সময়ে দেখতাম মুহূর্তের জন্য শিক্ষক যখন পরীক্ষার হল থেকে বের
হতেন, মনে হতো
যেন মাছ বাজারের নিলাম বুঝি কয়েক মিনিটের জন্য শুরু। কেউ কারো থেকে না জানা প্রশ্নটির উত্তর জেনে নিবে, ঘাড়
ঘুরিয়ে এদিক ওদিক তাকাবে আবার শিক্ষক ক্লাসে ফিরার সাথে সাথে আবার শুনসান নিরবতা।
এদেশের ছাত্রগুলোকে কতভাবে টেষ্ট করলাম পরীক্ষার খাতা হাতে দিয়ে পানি খাবার নাম
করে বের হয়ে
আসতাম কয়েক মিনিটের জন্য। নিরবতা যেমনটা ছিলো তেমন টাই
আছে, কোন পরিবর্তন নাই। সাথে সাথে ভাবি ৯ হাজার মাইল দূরের আমার দেশের কোন একটি স্কুল, কলেজ বা
বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষব বিহীন কোন পরীক্ষার হলের অবস্থা। মনে হয়
২ মিনিটে ক্লাসের ভিতরে একটা আলোড়ন হয়ে যেতো।
আমাদের কাছে সততার সংজ্ঞা অনেকটা পরিবর্তিত। অনেকের কাছে বলতে শুনেছি চুরি বিদ্যা মহা
বিদ্যা যদি ধরা
না পড়ি। সততায় আমাদের এই বেহাল দশা কি শুধু স্কুল বা কলেজে ? না , মনে হয়
না, যেখান থেকে শিক্ষা জীবন শেষ
করে সরাসরি কর্মজীবনে প্রবেশ করে, সেখানে একই
অবস্থা নিজের চোখে দেখা। আমরা যারা শিক্ষকের সামান্য অনুপস্থিতিতে সুযোগের সদ্ব্যাবহার করে যে
নৈতিক ভাবে দুর্বল কাজ করি, সেই
ছাত্র যখন দেশের গুরত্বপূর্ণ পদে এক
সময় উন্নিত হয়
তাহলে তারা আদৌ
ব্যক্তিগত স্বার্থের উর্দ্ধে থাকতে পারে ? হরহামেশাই বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষা, চাকরির পরীক্ষায় জালিয়াতির দ্বায়ে অনেক কে জেলে যেতে দেখি।
ভিনদেশের এইসব তরুনদের মাঝে সততা দেখলে মনে প্রশ্ন জাগে যে কিভাবে, কখন
এবং কারা এদের মনে এই সততার বীজ বুনেছে ? অনেক ভাবি, জানা শোনা লোকের সাথে আলাপ করার চেষ্টা করেছি, উত্তর খোজার চেষ্টা করেছি। ওদের কি
এমন আছে যা
আমাদের মাঝে নাই। এর কারন কি
শুধু ধনী আর
গরীব জাতি ? সব
কিছুর মতো এর
কারন ও কি
আমরা বলবো আমাদের অর্থনৈতিক দৈন্য দশা?
পরিবার, সমাজ নাকি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান কার
দ্বায়িত্ব বাচ্ছাদের সত
করে তোলার?
আমাদের দেশের সর্বোচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পড়ুয়া ছাত্ররা কি এতটুকু সততা অর্জন করতে পারে যে, মালিকবিহীন দোকানের খাবার খেয়ে নিজ
দ্বায়িত্বে দাম রেখে যাবে? বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে একটি পরীক্ষার হলে
শিক্ষকের অনুপস্থিতিতে এদিক ওদিকে না তাকিয়ে নিজের চেষ্টায় পরীক্ষা দিবে?
আমাদের পরিবর্তন টা
আনার খুবই দরকার। আর কতকাল আমরা পিছিয়ে থাকবো? অর্থনীতি, রাজনীতি, প্রযুক্তি এসবের চেয়ে সততায় এগিয়ে থাকা আরো বেশী সহজ। নিজের কাছে ছোট হওয়াই বড়
লজ্জার, নত হয়ে
যাই নিজের সততার সাথে তুলনা করলে। সবার সাথে চালাকী করে বাঁচা যায়,
নিজের থেকে কি
বাঁচা যায়?
Comments
Post a Comment