বছর বছর এত এত *** আর *** রসায়নবিদ বানিয়ে কি হবে? (এক জনের আপত্তিতে দুইটি শব্দ উঠিয়ে দেওয়া হয়েছে)
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় !! রসায়ন বিভাগ!! গর্ব করে বলেছি, বলি এবং ভবিষ্যতে ও বলবো আমার জীবনের ভীত গড়েছি এখানে। এই বিদ্যাপিঠের কল্যানেই পেয়েছি এক সুবিশাল অদৃশ্য নেটওয়ার্ক। শুধু বলতে হয় আমি এখানেই বড় হয়েছি, আর সাথে সাথে ১০-১৫ বছরের আগের অজানা অচেনা কোন সিনিয়র কিভাবে বন্ধুবাৎসল হয়ে উঠে এটা অনেকের কাছে আজব ও ঈর্ষনীয় হওয়াটাই স্বাভাবিক।
গল্পের বাকীটুকু একটু কষ্টের। চার বছরের অনার্স করেছি, থিসিস পাইনি তাই মাষ্টার্স ও করা হয় নি, তাই দেশে আর করার চেষ্টা ও করিনি। Column Chromatography আর থিন-লেয়ার কোমাটোগ্রাফি (TLC) কি জিনিষ আমার স্যাররা আমাকে খুব পড়িয়েছেন, কিন্তু আন্ডারগ্র্যাডে কোন দিন করিনি, দেখেনি। কিভাবে একটি বিক্রিয়ার মিশ্রন থেকে বিভিন্ন অংশ আলাদা করতে হয় তা- আমি জানি না। জানতে হলে আমাক জাহাঙ্গীরনগরে মাষ্টার্স করতে হবে।
টেনেসি থাকাকালীন সময়ে Professor Okoro মধ্যপ্রাচ্যের কোন এক দেশের ছাত্রী আফরীনকে Column করে তার একটা কম্পাউন্ডকে সেপারেট করতে সাহায্য করার জন্য আমার কাছে পাঠিয়েছেন, আমি তখন টেনেসিতে আখের গুছাচ্ছিলাম, ততক্ষণে আমি পার্ডু, কানসাস, ওয়েইন স্টেট, ওহাইয়ো, আর ম্যারিল্যান্ডে এই পাঁচটি বিশ্ববিদালয়ে পিএইচডির ভর্তির অফার পাই। তাই হয়তো Professor Okoro ভেবেছিলেন আমি হয়তো পারবো। আমি যে পারি না এটা জানলে মনে হয় পিএইচডি ভর্তির রিকমেন্ডেশন আরো মনোযোগ দিয়ে দিতেন। আমি জানি না এটা না বলে তার পুরো পদ্ধতি তারে দিয়ে পুনরাবৃত্তি করালাম প্রথম দিন আর আমি দেখলাম আর সেই রাতে ইউটিউব দেখে পরের দিন ভিন্ন ভাবে চেষ্টা করলাম। এই যাত্রায় বেঁচে গেলাম। আমার রিসার্চের কাজে সব ক্রিষ্টালাইজেশনে পিউর করায় কলাম করা আর লাগে নি। তাই মাষ্টার্স হয়ে গেছে আমি কলাম কিভাবে করে তখনো জানি না।
সাঁতার না জেনেই ঝাঁপ দিলাম সাগরে। অরগানিক সিনথেসিস নিয়ে কাজ করবো কিন্তু কলাম করা জানি না পৃথিবীর কোন রসায়নবিদ মনে হয় এটা শুনে আমাকে পরিহাস না করে ছাড়্রবে না। ২০১৫ সালের নভেম্বরের দিকে নতুনদের জন্য প্রফেসরের ওয়ার্ম-আপ প্রোজেক্টে একটা কলাম করতে হবে, এক ধরনের অগ্নিপরীক্ষা কলাম করতে হবে, জনৈক সিনিয়র শুধূ দেখিয়ে দিলেন এই ড্রয়ারে প্রায় শ-খানেক কলাম আছে- বাকী-কাজ আমার। তিন ধাপের ফিল্টার করে ৮০ জনকে ওই বছর এডমিশন দিয়েছে। প্রফেসর যদি জানতেন আমার মতো ঠুমকো এক জন কিভাবে চলে আসলো, তখনই হয়তো এডমিশন প্রসেস ঢেলে সাজাতেন। আমি পারিনি আলাদা করতে। লজ্জায় মাথা নিচু করে রাখতে হয়েছে। তারপর গেলাম পড়াতে। সেখানে ২য় বর্ষের ছাত্রদের ল্যাবে ৪ টা এক্সপিরমেন্ট করাতে হয়েছে কলাম ব্যবহার হয়েছে । তারা এর আগে ও করেছে, প্রসিডিউর দেখে দেখে ওরা ভালোই করেছে। মনে মনে দেখে শিখলাম ছাত্রদের কাছে। তারপর হলো টিএলসির সলভেন্ট কখনো করিই নি কিভাবে একটা টিএলসির রান করতে হয়। লজ্জাকি শুধু এখানে? অনার্স করেছি কলাম আর টিএলসি করা লাগেনি এটা শুনে আমার কাজে অনেকের আস্থা ও কমে গেছে।
শুনেছি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে কলাম আর টিএলসি ব্যাবহার করা হয় চতুর্থ বর্ষে কোন এক ল্যাবে জাহাঙ্গীরনগরে যেটা নাই। জানি না জগন্নাথ, চিটাগং বিশ্ববিদ্যালয় বা রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়, MBSTU, SUST এসবের কি অবস্থা। Column Chromatography. TLC, Rotary evaporator এসব রসায়নের বেসিক জিনিষ শিখার জন্য যদি ২-৩ বছরের মাষ্টার্স করা লাগে, তাহলে ২৮ বছরে পিএইচডি করা লাগে-যেখানে বিদেশিদের ২৮ এ পিএইচডি শেষ হয়। শুধু কি তাই! আমাদের মাষ্টার্স সর্বজন স্বীকৃত নয়, তাই আবার মাষ্টার্স করতে হয়।
শুধু অনার্স করে যদি এসব খুটিনাটি হাতে কলমে না শিখি তাহলে আমার মতো যারা শুধু অনার্স করে বিদেশে আসে মাষ্টার্স বা পিএইচডি করতে তাদের প্রতিনিয়তই মাথা নিচু করে থাকতে হবে প্রথম কিছু দিন। ৩য় আর চতুর্থ বর্ষে কলাম আর টিএলসি করা লাগে এমন কয়েক টা এক্সপিরিমেন্ট এড করলে ডিপার্টমেন্টের এমন কি ক্ষতি হয়?
Comments
Post a Comment