প্রকাশ্যে হল ও ডিপার্টমেন্টের নোটিশ বোর্ডে পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশ।
শিক্ষক-ছাত্র সম্পর্ক (পর্ব-৩)
বিষয়: প্রকাশ্যে হল ও ডিপার্টমেন্টের নোটিশ বোর্ডে পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশ।
বিষয়: প্রকাশ্যে হল ও ডিপার্টমেন্টের নোটিশ বোর্ডে পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশ।
আমার দু-একটা লেখায় অনেকে আমার উপর রাগ হতে পারেন। আবার অনেকের জীবণের সাথে মিলে যায়, তাই অনেকে আবার মেসেজ করে বলেন ভাই ঠিক বলছেন। অতিরঞ্জিত ভাবে কিছু না বলার চেষ্টা করি। সব কিছুই বাস্তব জীবণের সাথে ঘটে যাওয়া। তবে শব্দ চয়নে আরেকটু সতর্কতা প্রয়োজন। তাছাড়া ব্যস্ততা শুরু হতে আর ২-৩ দিন বাকী, এর পর হয় তো আর লেখা হবে না।
এক জনকে অল্প কদিনের পরিচয়ে ব্যক্তিগত প্রশ্ন করা যায় কি ? উচ্চ শিক্ষার প্রস্তুতির জন্য অনেকেই অনেককেই সরাসরি পরীক্ষার CGPA জিজ্ঞাস করেন। আরেকজনকে পরীক্ষার CGPA জিজ্ঞাস করা সাধারণত এশিয়ায়, আমেরিকা, ইউরোপের বিভিন্ন দেশে একধরণের অশোভন আচরণের মধ্যে পড়ে। আর এজন্য ইউরোপ আমেরিকার দেশ গুলোতে পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশ করা হয় অনলাইনে নিজস্ব একাউন্টে অথবা খামের মাধ্যমে যাতে একজন আরেকজনের ফলাফল দেখতে না পারে ।
আরেকটি বিশেষ ব্যাপার লক্ষণীয় যে, শিক্ষক যখন ছাত্রদের পরীক্ষার খাতা দেন, খাতাটিকে এমন ভাবে দেন যাতে করে এক জনের গ্রেড আরেক জনে না দেখে। একজন শিক্ষক যদি পাবলিকলি এক জনের গ্রেড আরেক জনকে বলে তাহলে ছাত্রটি শিক্ষকের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেবার অধিকার রাখে।
এখন ব্যাপার হলো, কেন গ্রেড বা সিজিপিএ নিয়ে এত লুকোলুকি?আমাদের দেশের জন্য এটা অনেকটা হাস্যকর। আপনার সিজিপিএ যদি খুব ভালো হয় আপনি বলবেন এসব হুদাই, এর কারণ আপনার বুঝার ক্ষমতা নাই। কারণ আপনার সিজিপিএ ভালো, আপনি সগর্বে সিজিপিও বুক ফুলিয়ে বলতে অভ্যস্ত।
আমাদের দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে অনার্সের সব গুলো বর্ষের ফলাফল বিভাগের আর হলের নোটিশ বোর্ডে নাম, পজিশন সহ টানিয়ে দেওয়া হয় পাবলিকলি।জানি না কত বছর আগের নিয়ম এটি। ব্রিটিশ রা নাকি এমন নিয়ম করেছিলো, তবে ব্রিটিশরা তাদের নিয়ম পিরবর্তন করেছে, আমাদের আর পরিবর্তন করা হয় নি।
একটা ক্লাশে অবশ্যই ফাষ্ট থাকবে, লাষ্ট থাকবে, ভালো সিজিপিএ, খারাপ সিজিপিএ সবই থাকবে। আর খারাপ সিজিপিএ আছে বলেই তো ভাল সিজিপিএ ধারী এত বাহাদূরী, না হলে সবাই এক ক্যাটাগরীর হয়ে যেতো। ৪ থেকে শুরু ২.৬০ পাওয়া সব ছাত্রের সিজিপিএ যদি হলের নোটিশ বোর্ডে টানানো থাকে, একবার কি চিন্তা করা যায় যে ছেলেটি লাষ্ট হয়েছে, আগে যেটাকে থার্ড ক্লাস বলতো বিশ্ববিদ্যালয়ে, হলে, বন্ধু মহলে তার সামাজিক মর্যাদা কোন অবস্থায় যায়? হলে কেন্টিনের ছেলেটি ও এসে অমুক ভাইয়ের সিজিপিএ চেক করতে পারে অথচ এটা আরেকজনের ব্যক্তিগত তথ্য থাকার কথা গোপন, শুধুই গোপন। আর এই পাবলিকলি ফলাফল প্রকাশের কারণে ১৪ বছর পরেও কারো কারো মনে থাকে অমুক আমার ক্লাশের একমাত্র থার্ড ক্লাশ ছিল!!
প্রকাশ্যে নোটিশ বোর্ডে ফলাফল প্রকাশ একটি ছাত্রের হতাশা আরো বাড়িয়ে দিতে পারে। একজন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক অবশ্যই ছাত্রজীবনের ভালো CGPA এর অধীকারী থাকেন, তাই তিনি ক্লাশের শেষ ছেলেটির এই হতাশাটি বুঝবেন কি না তা হলো প্রশ্ন। আমাদের দেশের ইউরোপ-আমেরিকা ফেরত শ্রদ্ধেয় শিক্ষকগণ সবাই বিদেশের এই সুন্দর নিয়মের সাথে পরিচিত। তাদের সদিচ্চায় নিয়মটি পরিবর্তিত হতে পারে। আর না হলে বছর বছর প্রত্যেক ব্যাচে নিরবে নিভৃতে হতাশাগ্রস্থের সংখ্যা বাড়বে ।
Comments
Post a Comment