শিক্ষক যখন ছাত্রের Recommendation Letter নিজ হাতে লিখতে অপারগ।।।
শিক্ষক-ছাত্র সম্পর্ক (পর্ব-১) বিষয়: শিক্ষক যখন ছাত্রের Recommendation Letter নিজ হাতে লিখতে অপারগ।।।
একজন শিক্ষককে যদি আকাশের মতো মনে করি, তাহলে অবশ্যই তাঁর একেক জন ছাত্র মানে এক এক জন সেই আকাশের তারা। মাঝে মাঝে কোন কোন ছাত্র এই তারাকে হার মানিয়ে চাঁদ হয়ে উঠে। আবার কখনো কখনো কোন ছাত্র সেই চাঁদকে হার মানিয়ে আবার কদাচিৎ সূর্যের মতো হয়ে উঠে, কম বেশী আলো ছড়ায় বটে তবে কখনো সেই আকাশের মতো বিশাল হতে পারে না। একজন শিক্ষক সব সময়ই শিক্ষক, আকাশের মতো হাজার হাজার তারা, দুই একটা চাঁদ সূর্যকে নিয়মিত ধারণ করে, আকাশের মাধ্যমে এসব চাঁদ, তারা, সূর্যের উদয় আর অস্ত। সবই বিশ্বাস আর শ্রদ্ধার ব্যাপার আর তা না থাকলে যে কারো কাছে এসব পাগলের প্রলাপ মনে হতে পারে।
আরো সোজা ভাবে বললে, শিক্ষক মানে বাবা-মা, ছা্ত্র মানে তাঁর সন্তান, শিক্ষক মানে জ্ঞান-বাবা, জ্ঞানের সাগর। শিক্ষক যদি একটি কোম্পানির মতো ভাবেন, ছাত্র মানে সেই সেই কোম্পানির পণ্য (product)। বিদেশে এসব পণ্যের বাজারজাত করণের জন্য মাঝে মাঝে কোম্পানির নিজের এসব পণ্যের গুনাবলী বিদেশীদের জানাতে হয়।
আমি রিকমন্ডেশনের কথা বলছি। আমেরিকা ইউরোপের বিভিন্ন গ্র্যাজুয়েট স্কুলে অ্যাপ্লিকেশনের সময় আমাদের শিক্ষকগণের কাছে যেতে হয় রিকমন্ডেশনের জন্য। আমাদের বাবা-মা মানে শিক্ষক তাঁদের সন্তানদের গুনাবলী (রিকমেন্ডেশন) নিজের হাতে দু-কলম লিখে দিতে পারেন না, বলেন , বাবা তুমি যা খুশি লিখে নিয়ে আসো, আমি স্বাক্ষর দিয়ে দেবো। কি হতভাগা সন্তান আমরা, আমাদের বাবা-মা রা (শিক্ষকগণ ) তাদের সন্তানের গুনাবলী লিখতে কয়েকমিনিট নষ্ট করতে চান না। এই লজ্জা কোথায় রাখি। অন্য দেশের কেউ এ শুনলে ছি! ছি! করবে।
যে ছেলে পৃথিবী দেখতে উদগ্রীব, সেই ছেলে নিজের দোষ-গুণ কিভাবে সাজিয়ে লিখবে কিভাবে পৃথিবী তাকে গ্রহণ করবে, সে কিভাবে জানবে, তাই গুগল-দেখে copy paste করে দুই একটা ফরমেট দেখে নিয়ে আসেন নিজের গুনাবলীর ছোতা, আর বাবা একটা সাইন করে দেন। বাপ-ছেলে দুজনেই খুশী।
যে ছেলে পৃথিবী দেখতে উদগ্রীব, সেই ছেলে নিজের দোষ-গুণ কিভাবে সাজিয়ে লিখবে কিভাবে পৃথিবী তাকে গ্রহণ করবে, সে কিভাবে জানবে, তাই গুগল-দেখে copy paste করে দুই একটা ফরমেট দেখে নিয়ে আসেন নিজের গুনাবলীর ছোতা, আর বাবা একটা সাইন করে দেন। বাপ-ছেলে দুজনেই খুশী।
উচ্চ শিক্ষার জন্য আমেরিকায় রিকমেন্ডেশনের গুরত্ব অপরিসীম। একটি সুন্দর রিকমেন্ডশেন লেটার একটি ছাত্রের জীবন বদলে দিতে পারে । ছাত্রের কোন গুণাবলী জানা না থাকলে এব্যাপারে ছাত্রের সাথে খোলাখুলি আলোচনা করা যেতে পারে, ছাত্রের বায়োডাটা নেয়া যেতে পারে। তবে লেটারে কি লিখা হবে লেখা হবে শিক্ষকের হাতে, ছাত্রের হাতে নয়। ছাত্রের রিকমেন্ডেশন ছাত্রের হাতে লিখিয়ে নেয়া এর চেয়ে অনৈতিক কাজ একজন্ শিক্ষকের জন্য লজ্জা ছাড়া কিছুই নয়।
আমার ক্ষেত্রে ৩-৪ টি রিকমেন্ডেশেন লেটার আমি অধমকে নিজ হাতে নিজের গুণাগুণ লেখতে হয়েছে। কতজনের সাথে কথা বলেছি, DU, JU, CU, RU, SUST, BUET সবখানে এমন বাবা-মায়ের অভাব নাই । মাঝে মাঝে দু-একজন ব্যতিক্রম সর্বত্র থাকে যাঁর নিজের হাতে লিখেন। অথচ টেনেসিতে মাষ্টার্সের সময় ১২ টি ইউনিভার্সিটিতে ৩৬ টি রিকমেন্ডেশেনের জন্য আমেরিকার ৪-৫ জন প্রফেসরকে আমার নিজের হাতে কিছুই লিখে দিতে হয় নি।
আমেরিকার কিছু ইউনিভার্সিটিতে শিক্ষকের রিকমেন্ডেশন ছাত্র এপ্লিকেশন প্রসেসের মাধ্যমে দেখার একটা সুযোগ থাকলে ও শিক্ষক নিজে ও এডমিশন কমিটি এটাকে খুব নিগেটিভলি দেখে।
আমেরিকা-ইউরোপের দেশগুলি যে দিন আমাদের এসব অনৈতিক রিকমেন্ডেশন লেটারের ব্যাপারে জানতে পারবে, হয়তো এসব রিকমেন্ডেশন আর কখনো আমাদের জন্য কাজে আসবে না। আমাদের পরিবর্তন আর বোধোদয় হবে ইনশাআল্লাহ ভবিষ্যতে একদিন।
আমেরিকা-ইউরোপের দেশগুলি যে দিন আমাদের এসব অনৈতিক রিকমেন্ডেশন লেটারের ব্যাপারে জানতে পারবে, হয়তো এসব রিকমেন্ডেশন আর কখনো আমাদের জন্য কাজে আসবে না। আমাদের পরিবর্তন আর বোধোদয় হবে ইনশাআল্লাহ ভবিষ্যতে একদিন।
লেখাটি প্রকাশ করেছে প্রথম আলো : http://www.prothom-alo.com/durporobash/article/1054569/%E0%A6%B6%E0%A6%BF%E0%A6%95%E0%A7%8D%E0%A6%B7%E0%A6%95-%E0%A6%AF%E0%A6%96%E0%A6%A8-%E0%A6%B6%E0%A6%BF%E0%A6%95%E0%A7%8D%E0%A6%B7%E0%A6%BE%E0%A6%B0%E0%A7%8D%E0%A6%A5%E0%A7%80%E0%A6%B0-%E0%A6%B8%E0%A7%81%E0%A6%AA%E0%A6%BE%E0%A6%B0%E0%A6%BF%E0%A6%B6%E0%A6%AA%E0%A6%A4%E0%A7%8D%E0%A6%B0-%E0%A6%A8%E0%A6%BF%E0%A6%9C%E0%A7%87-%E0%A6%B2%E0%A6%BF%E0%A6%96%E0%A6%A4%E0%A7%87
Comments
Post a Comment