২য় বর্ষ, ২০০৮/২০০৯, আ.ফ.ম. কামাল উদ্দিন হল, ১২৯ নাম্বার রুম, প্রফেসর রবিউল ইসলাম স্যার আর আমার লেখা বইটি।

২য় বর্ষ, ২০০৮/২০০৯, আ.ফ.ম. কামাল উদ্দিন হল, ১২৯ নাম্বার রুম, প্রফেসর রবিউল ইসলাম স্যার আর আমার লেখা বইটি।
প্রফেসর রবিউল ইসলাম। বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে এই একজন শিক্ষকেরই সান্নিধ্যে আসতে পেরেছি, উনার থিসিস ছাত্র না হয়েও নিজের প্রয়োজনে কথা বলতে পেরেছি উনার সাথে । উচ্চ মাধ্যমিকের রসায়ন বই পড়েছে স্যারের নাম জানে না এমন ছাত্র মনে হয় খুজে পাওয়া যাবে না। অাজ সকালেই স্যারের সাথে কথা হয়েছে । বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অবসর নিয়েছেন, বার্ধক্য ও ঝেঁকে বসার চেষ্টা করছে । জীবনে অনেক বই লিখেছেন। আগে ব্যাকপেইন ছিল, নতুন করে ডাক্তার বলেছে টেনিস এলবো পেইনে(Tennis Elbow Pain) ভুগছেন। সারা জীবন বই লিখতে লিখতে হাতের কবজিতে এক ধরণের নতুন ব্যথা। সারা জীবন জ্ঞানের আলো ছড়িয়েছেন। কত ছাত্রের জীবণ গড়ে দিয়েছেন তাঁর নিজের ও জানা নাই। কত জন তাঁর সান্নিধ্যে হয়েছে আলোকিত । তাঁর শেষ লেখা বইটি হলো রসায়ন ও আল-কোরআনের তুলনা নিয়ে। প্রায় ঘন্টা খানেক কথাবার্তা। অনেক অংশ জুড়েই থাকে সব সময় অনুপ্রেরণা আর দোয়া, বাকীটুকু খোজ খবর। পিএইচডি শেষ করতে আর কত দূর, বিবাহ, ব্লা ব্লা আরো কত কি। কথা বলা শেষে হঠাৎ পুরাতন একটা স্মৃতি মনে পড়লো।
প্রায় আট বছর আগের কথা। ২০০৯ মনে হয় অনার্স ২য় বর্ষে ছিলাম। আমার ছোট চাচা, শুধু চাচা নয়, আমার শিক্ষক ও ছিলেন। আমরা দুজন মিলে একটা বই লিখি, প্রায় ১৫০ পাতার, বইয়ের নাম "জৈব যৌগসমূহের ইউপেক নামকরণ [IUPAC Nomencleture of Organic Compounds]"। ধারণাটা আমার চাচার, সাথে আমি সঙ্গী লেখক।
আমাদের দুই জনেরই শিক্ষক, প্রফেসর রবিউল ইসলাম স্যার, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়। স্যারের কাছে দুজনেই বই লেখার ধারণা নিয়ে গেলাম, স্যার খুব অনুপ্রেরণা দিলেন, প্রকাশের আগে সপ্তাহখানেক ধরে পান্ডুলিপি আদ্য-প্রান্ত পড়ে অনেক সংশোধনী দিয়েছেন। বইয়ের প্রথম পাতায়ই কৃতজ্ঞতা স্বীকারে ছিলো স্যারের নাম।
গতানুগতিক না, একটু ভিন্ন ধরণের, ব্যবসার জন্য অবশ্যই ছিল না। সখ থেকে বলা যায়। এই বই খুব বেশী কেউ কিনবে না এটা আমরা জানতাম। অনেক ইংরেজী বিদেশী বই গুলো পড়তে হয়েছে। সব বইয়ের জৈব যৌগ সমূহের নামকরণ গুলো এই বইয়ে এক সাথে করা হয়েছে। সাধারণত জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে যারা প্রথম বর্ষে তারা ইংরেজী বই পড়ে না, এই নামকরণের জন্য অতশত বিদেশী বই কেউ পড়ে না। আর উচ্চ মাধ্যমিক ছাত্রদের ও অনেক নামকরণ পড়তো হতো। তাই সব নামকরণ একসাথে করেছিলাম। নামকরণ নিয়ে কারো এত মাতামাতি নাই, থাকার কথাও নয়, এটা জানা অতো জরূরী নয়, কেম ড্র সফ্টওয়ারে এঁকে দিলে ইউপেক নাম চলে আসে। কিন্তু এই সফ্টয়ার তো অনেক স্যারদের কাছেই নাই, ছাত্রদের কাছে কিভাবে থাকবে। সেই থেকে বইটি লেখা।
২য় বর্ষে তখন, প্রথম বর্ষের রেজাল্ট বেরোয়নি, লেখক স্বত্ব হিসাবে জীবনে প্রথম কিছু টাকা পেলাম, আমি খুশী, মা খুশি, বাবা খুশি, কামাল উদ্দিন হলে ১২৯ নাম্বার রুমে, রুমমেটদের সাথে মোড়ক উন্মোচন, ছবি তোলাতুলি। ফেসবুকেরো তখন আমার মতো উঠতি বয়স । আমার এক-দুই বছরের ছোট ছাত্ররা আমার বইটি পড়তো, অনুভূতি ছিল অন্যরকম। প্রকাশককে অনেকে বলতেন ২য় বর্ষের ছেলের নাম দেবার কি দরকার ছিলো-ও রসায়নের কি বোঝে!! মাত্র সেকেন্ড ইয়ার, আবার কেউ এপ্রিসিয়েট করতো। প্রথম বর্ষের ফলাফল খুব খারাপ এসেছে। মনে হলো চারদিকে মরূভূমি আর বাতাসে ধূলো এসে আমার চোখে পড়ছে। আনন্দ সব নিমিষেই হারিয়ে গেলো। ৩য় বর্ষে উঠতে না উঠতেই ২য় সংষ্করণ বেরুলো।
রবিউল স্যার দেখা হলে আমি চুনোপুটিকে মজা করে লেখক লেখক বলে ডাকতেন। রেজাল্ট খারাপ তাই লজ্জা চোখ লুকোতাম আর আই কন্টাক্ট এভয়েড করতাম। কোন এক ভাইভা বোর্ডে রবিউল স্যার ছিলেন, প্রথমেই, এই ছেলে কিন্তু একজন লেখক, এই লেখক কি প্রশ্ন করবো বলো,রসিকতা দিয়ে শুরু হলো অন্য স্যারদের প্রশ্নবাণ। ভালোই লেগেছিলো, আবার খারাপ ও লেগেছিলো অনেক কিছু ই পারি নি তাই। রবিউল স্যারের কতো কতো গুনী ছাত্র-ছা্ত্রী সারা বিশ্বে ছড়ানো ছিটানো, আমার কথা কি মনে থাকে, তাই ফোন দিয়ে বলি স্যার আমি রেজাউল হক নাইম, ইউপেক নামকরণ, চিনতে আর দেরী লাগে না।
বইটি আজ ও বেঁচে আছে । ৬ষ্ঠ সংষ্করণ চলে খুব সম্ভবত, এখন মনে হয় বইটি অনেক অসম্পূর্ণ, আরো অনেক কিছু যোগ করা প্রয়োজন। ৮ বছর আগে ও ছিলাম ২য় বর্ষে, এখনো আমি ২বর্ষেই আছি। মাঝে অনেক দূর হলো পাড়ি, তারপরও কিছু করা হয় নি অনেক কিছু করা বাকী, অনেক কিছু ধরা বাকী, কোয়ালিটেটিভ এক্সাম, কেনডিডেসী এক্সাম, আরো কতো কি, সামনে অনেকগুলো উঁচু উঁচু পাহাড়, পেরুতে হবে সব, যেতে হবে অনেক দূর।!!!

LikeShow more reactions
Comment
Comments
Alif Joy অসাধারণ ছিলো বইটা।
অনেক অনেক উপক্রিত হইসিলাম এই বইটাতে। ফার্স্ট এবং সেকেন্ড ইয়ারে বিশেষ করে। যত্ন করে তুলে রাখসি বইটা। 
thanks vai for this amazing book!
Asadullah Khan Galib আমিও বইটা কিনেছিলাম।
অনেক কাজের বই ছিলো।
...See More
Shahriar Miraz vai, amr master supervisor amk ask korche ami Chemdraw pari kina ami bolsi na ami pari na but shikhe nibo .Kal internet theke download korci but kaj hosse na ( serial number casse ) ...ekta link diben plz jate free download korte pari ?
Sumaiya Khan Pariza Proud to have him as supervisor and being his last thesis student . . vaiya Greetings for your book.
Mahmudur Rahman Great..tomar ai boi kivabe pabo!!! Address file Ami kinbo...
Mohiuddin Akber Nice Nice! as always.. (proud to be ur X-roommate man Rejaul Hoq Nayem)
Alauddin Fahad bah...you have already written a book!!!
Mahfujur Mahfuj শুভ কামনা ভাই আপনার জন্য।
M R Sajal Bhuiyan Great..brother
Abdullah Al Maruf ami hazarir boi porsi
Planner Shahjahan Raton Congratulations. Good luck bro..
Arif Mahmud Congratulations dear writer...
Abu Sufian Sayem আরো বই লিখার তৈফিক দান করুক আল্লাহ্ তায়ালা.....
Ahasan Habib congrats vaia.....
Halima Bagum Tumi boi likhecho eta to jantam na. Congratulations Nayem
Mohammad Mosaddequl Islam You r bound to break the hinderance go ahead brother..... Onk din kotha hoyna fb te.... Miss uRejaul Hoq Nayem bro
UnlikeReply2January 9 at 5:12amEdited
Abu Rayhan Doel It's great knowing this but greater that I know you too
Chemical Yeasin congratulation
Humira Sultana Mowri WISH YOU All the Best

Comments

Popular posts from this blog

Statement of Purpose এর নমুনা-13 ( Analytical Chemistry)

আমেরিকার যে সব বিশ্ববিদ্যালয়ে পিএইচডিতে এপ্লাই করতে জিআরই লাগে না, তার প্রাথমিক তালিকা_১ :

Statement of Purpose এর নমুনা-১ ( Organic Chemistry)