যুগে যুগে পরীক্ষায় জালিয়াতীর ধরণের ভিন্নতা
যুগে যুগে পরীক্ষায় জালিয়াতীর ধরণের ভিন্নতা**********************
মেট্রিক পরীক্ষাকে কেন্দ্র করে মায়ের কাছে থেকে তাঁর আমলের এলাকায় স্থানীয় কলেজে নকলের এক মজার বাস্তব গল্প শুনেছি। মেট্রিক, ইন্টার পরীক্ষাকে কেন্দ্র করে এক সময় এক্সফেল্ড খুব জনপ্রিয় শব্দ ছিলো। কোন স্কুলে কয় জন পাশ করছে তার চেয়ে কোন কেন্দ্রে কয় জন এক্সফেল্ড হয়েছে সেটা ছিলো গরম খবর।
কোন এক পরীক্ষার হলে একই রুমে ননদ-ভাবী দুইজন পরীক্ষা দিচ্ছেন। জানালা দিয়ে বাগান থেকে ছোট ভাই বোনকে নকল মারলো, আর সেই নকলেই শেষ লাইণে লাল-দাগের দুইটা স্টার দিয়ে লেখা “তুই লিখে ভাবিরে দিস” । ননদ-ভাবি দুই জনেই সেই শেষ লাইন নিজেদের খাতায় লিখে দিলো। হলে ম্যাজিষ্ট্র্যাট আসতে না আসতে সবাই যখন সাধু সাজার চেষ্টা করছে, মেজিষ্ট্র্যাট সন্দেহের বশবর্তী হয়ে দুজনের খাতা চেক করে দেখে একই উত্তর আর শেষ লাইন ও একই “ তুই লিখে ভাবিরে দিস” । সাথে সাথে ননদ-ভাবী দুজনেই এক্সফেল্ড (বহিষ্কার)। আর এক্সফেল্ড হবার কারনে ঘটনাটি কেন্দ্রের বাহিরে প্রকাশ পায়। কোন ভাবে ১০-১২ টা পরীক্ষা ম্যাজিষ্ট্র্যাটের চোখ এড়াতে পারলেই কোন না কোন ভাবে পাশ। নকল করা অনেক কষ্টের কাজ, তাই এই one dimensional পদ্ধতি পরিবর্তন হয়েছে।
তারপর একটা জেনারেশন ছিল পপি গাইড নির্ভর। ৫০০টি নৈর্বক্তিক প্রশ্ন পড়লে ৫০ টা কমন আর সাথে নকল। পপি গাইড গুলো এমন ভাবে লিখা হতো যেটাতে প্রতিটা প্রশ্ন এক পাতার মধ্যে শেষ হয়, আর বইয়ের সাইজ ও ছিল যাতে করে ছোট ছোট, নকল বানাতে , ছুড়ে মারতে সুবিধা হয়। আর এজন্য এই two dimensional পদ্ধতি ব্যাপক জনপ্রিয় ছিল।
নকলবাজী বন্ধ হয়েছে অনেক অনেক বছর হলো। ২০০০ সালে থেকে এখন অবধি নকল নাই, পপি গাইড ও নাই, তবে পপি গাইডের বদলে ভাইবার, ইমো, হোয়াটসঅ্যাপ এসব বের হয়েছে, এগুলো এখন পপি গাইডের চেয়ে ভালো কাজ করে। পূরবর্তী জমানার two dimensional পদ্ধতির দুইটা dimension পরিবর্তন হয়ে নতুন দুটি dimension এর আবির্ভাব হয়েছে। এর একটি হলো শিক্ষক-শিক্ষামন্ত্রী ডোনারের ভূমিকায় অবর্তীর্ন হয়েছেন, খাতায় কিছু থাকলেই হলো, নাম্বার দিতেই হবে, এতে করে পরীক্ষা কেন্দ্রের আশে পাশে নকল সরবরাহকারীদের কষ্ট অনেক কমেছে ।
আর সর্বশেষ যে নতুন dimension যোগ হয়েছে, প্রশ্নপত্র ফাঁস। ২০০ টাকায় ও নাকি প্রশ্ন পাওয়া যায়। পরীক্ষার আগের কদিন কিছু নরপিশাচ মার্কা বাপ-মায়ের দৌড়যাঁপ বেড়েছে। এখন পরীক্ষার হলের আশে পাশে লোকজনকে নকল নিয়ে দৌড়াদৌড়ি করতে দেখা যায়না, ছাত্র-ছাত্রীরা খুব মনোযোগ সহকারে পরীক্ষা দেয়, একটা টুশব্দ ও করে না। ম্যাজিষ্ট্যাট ও কেন্দ্রে আসা লাগে না। ছাত্রছাত্রীরা খুশী, বাপমা ও খুশী, স্যাররা ও খুশি। সবাই ১০০ এ ১০০ পায়। জাতি প্রতি বছর আনন্দের জোয়ারে ভাসে। মিষ্টির দোকানে হিড়িক লাগে। সবার মুখে হাঁসি লেগেই আছে। সোনার বাংলাদেশ রকেটের গতিতে এভাবে এগিয়ে যাচ্ছে।
Comments
Post a Comment