আমার সেই শখ আজো পূরণ হলো না
আমার সেই শখ আজো পূরণ হলো না............................................
প্রায় ১২-১৪ বছর আগের কথা। বহু দিন তো বলাই যায়। ২০০০ সালের পরের দিকে, আমাদের গ্রামে নতুন ধরণের যান্ত্রিকতার আবির্ভাব হয়েছে। গ্রামের উচ্চবিত্ত কৃষকের নজর কেড়েছে এক দানব আকৃতির চাকার গাড়ি। এতো বিকট শব্দ করতো যে, স্কুলের ছোট ছোট ছেলেমেয়েরা ক্লাস ফেলে এসে কৌতুহলি মন নিয়ে অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকতো। চালককে দেখে মনে হতো সর্বোময় ক্ষমতার অধিকারী, নিমিষেই ধূমড়ে মুচড়ে দিতে পারেন সব কিছুই। তাই দূর থেকে উকি মেরে দেখতাম, স্বপ্ন দেখতাম আমি একদিন এই গাড়ি চালাবো।
এক গ্রামের উঁচু উঁচু জমি থেকে লাখ লাখ টাকার মাটি কিনতো আরেক গ্রামের মাটি ব্যবসায়ী। তার পর সেটা বিক্রি করতো ইটখোলার মালিকদের কাছে চওড়া দামে। চাকা গুলো এতো ভয়ঙ্কর বড় খাঁজযুক্ত ও শক্তিশালী ছিল যে, মাস খানেকের চলাফেলায় গ্রামের মাটির রাস্তাগুলো বা আংশিক পাকার রাস্তাগুলো ভেঙ্গে যেতো, আর বর্ষাকালে কর্দশাক্ত পথে মানুষের কষ্টের সীমা থাকতোনা, মনে মনে সাধারণ মানুষ অভিশাপ দিতো আর দোকানে চায়ের চুমুকের সাথে সাথে তিক্ততা প্রকাশ করতো, কারন এসব মানুষ প্রতিবাদের ভাষা জানতো না, এত বড় দানবাকৃতি গাড়ির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করবে!
আর সেই পথ ধরে সাদা পোশাকে স্কুলে যেতাম, আর বর্ষায় কাদায় ভরে যেত স্কুলের সাদা পোশাক। হাঁটার ধরণের উপর ভিত্তি করে কাদা-জল পিছনে শার্ট পর্যন্ত উঠতো কখনো।
মাটির ক্ষুধা এমন বাড়া বেড়েছে, যখন ক্ষেত খামারের মাটি শেষ, নজর পড়লো পুকুর-দিঘীগুলোর দিকে। যান্ত্রিকতার নতুন আরেক ধাপ। মটর দিয়ে মাটি উঠাতো পুকুর থেকে কাদা মাটি, ঠিকা দামে কিনতো, তারপর বিক্রি হতো। বহন করতো সেই একই গাড়ি।
আমাদের সবাইকেই একদিন এই মাটির সাথেই মিশে যেতে হবে তখন এসব বুঝার টাইম ও নাই, ক্ষমতা ও ছিল না। রসায়ণ তো দূরে থাক, ডাক্তার, ইঞ্জিয়ার হবার স্বপ্ন ও তখন বুঝতাম না, তখন সমসাময়ীক স্বপ্ন ছিল এই দানবাকৃতি গাড়ি একদিন আমি চালাবো । সে্ আশা আজো পূরণ হয় নি। কদিন আগে এক জায়গায় ঘুরতে গিয়ে দেখলাম সেই বিশাল বিশাল দানবীয় আকৃতির চাকা আর মনে পড়ে গেলো অনেক কিছু।
Comments
Post a Comment